চোখের যে সমস্যার কারনে চোখের লেন্স ঘোলা কিংবা অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়ার কারনে খালি চোখে স্বাভাবিক কিছু দেখতে অসুবিধা হয়, সেটাকে চোখের ছানি (Cataracts) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
চোখের ছানির অনেক লক্ষণ দেখা যায়। প্রধান লক্ষণগুলা হলোঃ
- চোখের মনির কোঠায় বিবর্ণ রঙ দেখা দিবে
- চোখে দেখতে কম পাওয়া
- অবস্থা বেশি জটিল হলে অনেক সময় অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে
- উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সমস্যা
- রাতের বেলা চোখে দেখতে সমস্যা দেখা দেয়
- চোখের আশে পাশে অন্যরকম এক বর্ণ বলয় দেখা যায়, যা দৃষ্টিভ্রমের সৃষ্টি করে
- ধীরে ধীরে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়
চোখের ছানি পড়ার কারন (The Cause of Cataracts)

চোখের ছানি পড়ার কারন
অনেক কারনেই ছানী দেখা দিতে পারে চোখে। তবে বার্ধক্যজনিত কারণই প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এম্নিতেই চোখের দৃষ্টি শক্তি কমতে থাকে কিন্তু এক পর্যায়ে যেয়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয় এবং চোখে ছানীর কারনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় দেখা যায় মানসিক আঘাতের কারনেও চোখে সমস্যা দেখা দেয় আবার কখনো কখনো চোখের অন্য সমস্যার কারনে অস্ত্রোপচার করালে সেক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে কিংবা সাইড ইফেক্ট হয়ে চোখে ছানীর দেখা দিতে পারে।
আবার বিকিরণের প্রভাবের কারনেও চোখে ছানী হয়। তবে অনেক মেডিকেল কেইসের হিস্ট্রি ঘাটলে দেখা যাবে জন্মগতভাবেই অনেকের চোখে ছানি থাকে এবং ছোট থেকেই এটা দেখা যায়। সেক্ষত্রে আসলে চিকিৎসা করে ছোট থেকেই ঠিক করা লাগে। অনেক সময় ব্রেনের কিংবা শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কারনেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
চোখের ছানি (Cataracts) পড়লে করণীয়
চোখ অনেক সেন্সিটিভ একটা অঙ্গ, তাই অল্পতেই অনেক বড় কোনো ঝামেলা হয়ে যেতে পারে কিংবা দেখা দিতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত তাপে কিংবা সূর্যের ইউভি রশ্মির কারনেও চোখে প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় ওষুধ সেবনের ফলে, বিশেষ করে স্টেরয়েড আছে এমন ওষুধ সেবন করলে চোখে ছানি পড়তে পারে কিংবা ঝুঁকি থাকতে পারে।
স্বাভাবিক নিয়মে চোখে ছানি পড়লে চশমা পরার নির্দেশনা দিয়ে থাকলেও অস্ত্রোপচার এর জন্য ডাক্তাররা সবসময় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তিনভাবে ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার এর কথা বলে থাকেন, ফ্যাকো, এস আই সি এস এবং ই সি সি ই, এই তিনভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে ছানি অপসারণ করা হয় এবং রোগীর স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসে।
চোখের ছানি প্রতিরোধ করার উপায় (Preventing Cataracts)

চোখের ছানি প্রতিরোধ করার উপায়
চোখের ছানি (Cataracts) প্রতিরোধে আমাদের বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান বিষয় হচ্ছে, যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সাবধানে চলাচল করতে হবে এবং বাইরে গেলে রোদ চশমা পড়তে হবে যেনো চোখে কিছু লাগলেও সেটি অল্পতেই সেড়ে উঠে।
এছাড়াও বেশি ধুলাবালি যুক্ত জায়গা থেকে এসেই সাথে সাথে চোখ হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। দুর্ঘটনা যেকোনো ভাবে হয়েই চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে তাই মুখ ধোয়ার সময় অবশ্যই সাবধানতার সাথে মুখ ধুতে হবে যেনো সাবানের কিংবা ফেসওয়াশের কোনো কিছু চোখের কোনায় ভুল ক্রমেও না ঢুকে চোখের সমস্যা করতে পারে।
এছাড়া খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে বলতে গেলে ছোট মাছ, শাক সবজি এসব বেশি করে খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমানে মাছ বিশেষ করে ছোট মাছ খেতে হবে। কিছুক্ষন পর পর চোখে পানির ঝাপটা দিতে হবে এবং চোখের কোনার লেগে থাকা কেতুর পরিষ্কার করে রাখতে হবে নিয়মিত। চোখে কিছু লাগলেই সাথে সাথে পানি দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
যাদের জন্মগতভাবে এই সমস্যা তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব যেনো ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে এবং সে অনুযায়ী প্রেস্ক্রাবাইড ওষুধ সেবন করে, নাহলে পরে আরো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
অনেকে চোখকে ইউভি রশ্মি কিংবা ধুলাবালি থেকে বাঁচাতে সানগ্লাস ছাড়াও পাওয়ার ছাড়া চশমা পরে থাকে, এটা একদিকে যেরকম ফ্যাশনেবল তেমনই চোখকেও রক্ষা করতে পারে। সসর্বোপরি, অবশ্যই চোখের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং কোনো রকম অবহেলা করা যাবে না।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ