বুকে ব্যথা (Chest Pain) বা চেস্ট পেইন হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা মৃদু থেকে তীব্র ব্যথার বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত হয়। বুকে ব্যথা অধিকাংশ সময়ই ভীতিজনক হয়ে ওঠে। কারণ এটি হার্ট অ্যাটাক অথবা হার্টের বিভিন্ন অসুখের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যাইহোক ব্যথাটি যদি প্রথম অবস্থায় ওষুধের না কমে তখন একজন পেশাদার চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়াও লক্ষ করতে হবে যে আমাদের বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ড ছাড়া অন্য গুলো প্রত্যঙ্গ আছে যেমন পাকস্থলী, ফুসফুস, অগ্নাশয় ইত্যাদির সাথে পেশি ও স্নায়ুর মতো অন্যান্য উপাদান থাকে। অতএব বুকে ব্যথা শুধুমাত্র হৃদপিণ্ড নয় উপরে উল্লেখিত যেকোন প্রত্যঙ্গের সমস্যা থেকে ব্যথা হতে পারে। বুকে ব্যথা যদি আপনা আপনি উপশম না হয় তাহলে আপনি খুব দ্রুতই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং রোগ লক্ষণ নির্ণয় করেন।
বুকে ব্যথার উপসর্গ (Chest Pain Symptoms)

বুকে ব্যথার উপসর্গ (Chest Pain Symptoms)
একজন সচেতন মানুষ হিসেবে বুকে ব্যথার (Chest Pain) উপসর্গগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত।
- বমি বমি ভাব
- ঘড় চোয়াল অথবা হাতে ব্যথা সঞ্চারিত হওয়া
- বুকে ভারভর্তী ভাব
- বুকের জায়গায় জায়গায় চাপের সংবেদন
- কাঁধে ব্যাথা
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- বুকের জায়গায় চাপের একটা অনুভূতি
- বমি করা
- বুক ধড়ফড়ানি হতে হৃৎস্পন্দের দ্রুততর বেশি জোরালো এবং অনিয়মিত হওয়া
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- হলদে সবুজ থুতু কাশিসহ
- শ্বাসকষ্ট
- নিম্ন উচ্চরক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপ
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- কোন রকম শারীরিক কাজকর্ম ছাড়া ন্যূনতম কাজকর্মে অবসাদ।
বুকে ব্যাথার কারণ (Chest Pain Reasons)

বুকে ব্যাথার কারণ (Chest Pain Reasons)
কি কি কারনে আমাদের বুকে ব্যথা (Chest Pain) হতে পারে সেই কারনগুলি চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক।
পাঁজরে আঘাত: আপনার পাজরে যদি কোন সময়ে গুরুতর আঘাত পান এবং এর কারণ যদি কোন সমস্যা হয় কিংবা ভেঙে যাওয়া ফ্রাকশন হওয়া থাকে তাহলে কিন্তু বুকে ব্যথা হতে পারে। আপনার বুকে ব্যথা পজারের কাছে যদি অসহ্য ভাবে হয় তাহলে বুঝবেন আপনার পাঁজরে কোন সমস্যা আছে।
পেপটিক আলসারঃ পেপটিক আলসারের জন্য সরাসরি বুকে ব্যথা না হলেও আমাদের বুকের কাছাকাছি একটি হালকা চাপ অনুভব হয়ে থাকে। এটি মূলত পাকস্থলীতে হয়ে থাকে।সে ক্ষেত্রে এন্টাসিড খেলে ব্যথা কমে যায়।
ফুসফুসের সমস্যাঃ যদি কোন কারনে পাঁজরে আর ফুসফুসের মধ্যে বাতাসে আটকা পড়ে যায় এবং জমাট বাধতে থাকে তখন ফুসফুসের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। আর তখনই ফুসফুস কাজ করতে পারে না এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয় সাথে বুকে ব্যথা হয় এক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে তার সাথে বেশি মাত্রায় বুক ধড়ফড় করতে পারে।
হার্নিয়াঃ এই ধরনের হার্নিয়া তখন হয় যখন আমাদের পাকস্থলীর কিছু অংশও উপরের দিকে উঠে হার্টের কাছাকাছি চলে আসে। এই ধরনের হার্নিয়ার কোন উপসর্গ হয় না। যদি আমাদের খাওয়ার পর পাকিস্থলীর উপরের অংশ হার্টের নিচের অংশের দিকে আসে তখন বুকে জ্বালা শুরু হয় এবং বুকে ব্যথা হয়।
প্যানিক অ্যাটাকঃ হঠাৎ করে কোনো কারণে ভয় পাওয়া এবং তার থেকে বুক ধড়পড় করা আসলে প্যানিক অ্যাটাক। এটা অনেক সাহসী মানুষদেরও হয়ে থাকে।এবং এর থেকে বুকে ব্যথার সৃষ্টি হয়।এর সঙ্গেই হতে পারে বুক ধড়ফড়।
নিউমোনিয়াঃ নিউমোনিয়া অনেক সময় আপনার বুকে ব্যথার (Chest Pain) কারণ হতে পারে। যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভোগেন তাহলে তার প্রভাবে বুকে ব্যথা হতে পারে সঙ্গে থাকতে পারে কাশি এবং সর্দি। কাশির সময় কাশতে গেলে বুকের ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে।
পেরিকার্ডিটিসঃ এটি এমন একটি অবস্থা যখন বুকের চারপাশে একটি চিনচিনে ব্যথা হয়। আর এই ব্যথা বাড়ে যখন আপনি শ্বাস নিতে যান এবং শুতে যান।
টিউবারকিউলোসিসঃ টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষা তখনই হয় যখন এর ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে জমাট বাঁধে তখন খুব বেশি কাশি এবং বুকে ব্যথা হয়।
হাইপারথ্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিঃ এই রোগটি হয় যখন বিভিন্ন জেনেটিক কারণে হার্টের দেয়াল ভারি হয়ে আসে তখন হার্ট এর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচলে খুব সমস্যা হয় এবং হার্টের পেশিতে টান ধরে আর তখনই খুব শ্বাসকষ্ট হয় আর বুকে ব্যথা হয়।
এসোফাজেল হাইপারসেনসিটিভিটিঃ খাদ্যনালীর ভেতরে যে বাতাসের চাপ থাকে তাতে যদি কখনো কোনো তারতম্য হয় এবং যদি অ্যাসিড ফ্রম করে তাহলে কিন্তু ব্যথা হতে পারে। আর যেহেতু খাদ্যনালী বুকের কাছাকাছি তার থেকে বুকের ব্যথা সৃষ্টি হয়।
এসোফাজেল কনট্রাকসন ডিসঅর্ডারঃ খাদ্যনালীতে যদি কখনো কোনো কারনে সংকোচন হয় তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যদি কোনো কারণে এটি হয় তখন বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
কস্টোকন ড্রাইটিসঃ পাঁজরের কার্টিলেজের যদি জালা হয় তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয় এর ফলে কিন্তু বুকে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা তখন আরো বাড়ে যখন আপনি কোন নির্দিষ্ট পজিশনে বসবেন কিংবা আপনি যখন শারীরিক কসরত করবেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার
আপনি যদি নিচের কোন একটি উপসর্গ অনুভব করেন তৎক্ষণাৎ একজন ডাক্তার দেখান।
বুকে ব্যাথার (Chest Pain) উপসর্গগুলো হচ্ছে
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- মাথা ঘোরা
- ব্যাখ্যার অতীত অনর্গল ঘাম হতে থাকা
- অত্যন্ত নিম্ন বা অত্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ
- আপনার কাশিতে হলুদ অথবা সবুজস্লেসা বের হওয়া
- জ্বর হয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- বুকে আটো ভাব অথবা নিষ্পেষণের সংবেদন সাথে ব্যথা
- আপনার অত্যন্ত বুকে ব্যথা বা শুয়ে পড়ে অথবা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে উপশম হচ্ছে না এরকম
- অবিরাম বুকে ব্যথা যা কিছুতেই যাচ্ছে না
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ