গ্রীষ্মমন্ডলীয় যেসব রোগ আছে, তার মধ্যে যে ভাইরাসজনিত রোগটিতে সর্বাপেক্ষা বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়, সেটি হচ্ছে এডিস মশার কামড়ে বিস্তার হওয়া ডেঙ্গু জ্বর (Dengue Fever)। স্বাভাবিক ফ্লুজনিত উপসর্গ এই ভাইরাসের লক্ষণ হলেও, মূলত এডিস মশার কামড়ের তিন থেকে পনেরো দিনের মাথায় রোগের উপসর্গগুলো রোগীর মধ্যে ভালো মতো পর্যবেক্ষিত হতে দেখা যায়।
প্রধান উপসর্গের মধ্যে, জ্বর, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, গাত্র- পেশিতে অসম্ভব ব্যথা, শরীরে হাল্কা এলার্জির মতো হওয়া, বমি ভাব কিংবা তিন চার করে বমি হওয়া উল্লেখযোগ্য । তবে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে, রোগীর রক্তপাত হবে, রক্তচাপ ভয়াবহ ভাবে কমে যাবে এবং রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা খুব বাজে ভাবে কমে যেয়ে রোগীর অবস্থা জটিল হবে। যদিও সাধারণ মাত্রায় রোগী দুই থেকে সাত দিনের মাথায় ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে রোগী সেড়ে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে।
জ্বর হলেই চিন্তিত হবার কারণ নেই
অনেকের ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর দেখা দিয়েই, কয়দিন পরেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের শরীরের ইমিউনিটির উপরে আসলে এই জ্বরের যথেষ্ট প্রভাব কাজ করে। তবে সচেতনতার সাথে ডাক্তারের শরনার্থী হয়ে চিকিৎসা চালালে সহজে আরোগ্য পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই যেনো নিজেদের মতো চিকিৎসা না করে, ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভুলভাল ধারণা
- প্ল্যাটিলেট কিংবা রক্তকনিকা নিয়ে এখন আর চিন্তা করার দরকার হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দিনকে দিন নতুন নতুন মেথডের সাথে সাথে এই রোগকে দমিয়ে ফেলতে এখন আর চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয় না।
- অনেকেই নিজেদের মতো চিকিৎসা নিয়ে ফেলতে চেষ্টা করেন, যা একদমই উচিত নয়। অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করার আগে, রোগীর আগের মেডিক্যাল হিস্টরিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা জেনে তবেই ওষুধ সেবন করা উচিত।
- অনেকের ধারনা, বেশি পানি খাওয়া উচিত না। যা একদমই ভুল, বেশি করে ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তরল জাতীয় খাবার সেবন করতে হবে।
- ডেঙ্গু হলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়, ধারণাটা ভুল। ঘরে থেকে রোগী সাবলীলভাবে হাঁটা-চলা করে ঘরোয়া পরিবেশে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে।
- ডেঙ্গুরোগের ক্যাটাগরিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাই আগেই ডেঙ্গু হয়েছে শুনে, হাহুতাশ না করাই ভালো। সি ক্যাটাগরিতে যদি রোগীর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা যায় তবেই ঠান্ডা মাথায় রোগীর জন্য সব থেকে ভালো ডিসিশন নিতে হবে, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
ডেঙ্গুজ্বরের সময়কাল

ডেঙ্গুজ্বরের সময়কাল
সাধারনতঃ প্রতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরের কাছাকাছি সময়ে এর প্রকোপ দেখা দিলেও, সরকার এখন যথেষ্ট সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে এই ভাইরাসের প্রতিকারের। আরেকটি বিষয় জানা জরুরী, এডিস মশা কিন্তু অন্ধকারে নয়, বরং ভোরের দিকে কিংবা সন্ধ্যা হয়ে আসার সময়ের দিকে বেশি কামড়ায় এবং আক্রান্তের শিকার হয়।
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আগে এই জ্বরের প্রকোপে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতো তবে এখন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়ে গিয়েছে, তাই এই রোগ এখন আর কোনো ভয়ের কারন না। সময় মত সুচিকিৎসার ফলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বরের সময় খাদ্যাভাস

ডেঙ্গু জ্বরের সময় খাদ্যাভাস
এই জ্বরের সময় বাইরের কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার একদম পরিহার করতে হবে এবং যতটা সম্ভব পারা যায় কম ঝাল যুক্ত ফ্রেশ শাক সবজির তরকারি খেতে হবে। তরল পানীয়, যেমনঃ ডাবের পানি, তরমুজের রস কিংবা বিভিন্ন ফলের জুস, ফ্রেশ ঘরে বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে বাজারজাত কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করাই উত্তম। পুরাতন তরকারি পরিহার করা উচিত। নতুন রান্না করা খাবার রোগীকে খাওয়ানোর জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর বেশি করে মিনারেল ওয়াটার পান করতে হবে, মিনারেল ওয়াটার সম্ভব না হলে পানি ফুঁটিয়ে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পান করতে হবে। কোনো ভাবেই কাঁচা পানি পান করা যাবে না।
খুব ভয়ের কিছু না হলেও নাগরিকের সচেতনতা আর সরকারের প্রাণপণ প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে এক মহামারীকে আমরা এখন সহজেই বশ করতে পেরেছি, এবং এতে করে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও একটা দৃষ্টান্তমূলক মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ