
হৃদরোগ (Heart Attack)
হৃদরোগ (Heart Attack) বলতে আমরা অনেকেই কেবল হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বা হার্টের সমস্যা বুঝি। কিন্তু আসলে হৃদসংবহনতন্ত্র, বৃক্ক, প্রান্তিক ধমনী ও মস্তিষ্কের সম্পর্কিত রোগকে একসাথে নিয়ে আলোচনা হয় হৃদরোগের।
তাই, কেবল হার্টের সমস্যা বলতে হার্টের প্রব্লেম হয় বলাটা ভুল। ১৯৭০ সালের পর থেকে নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে হৃদরোগের কারনে মৃত্যুর হার কমে গেলেও, উন্নয়নশীল দেশ এবং কম উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এই হার বেড়েই চলছে। প্রাপ্তবয়স্কদের এই হৃদরোগ বাড়ার হার সবচাইতে বেশি, তাই তাদের জন্য হৃদরোগ ঝুঁকিপূর্ণ ও বেশি।
হৃদরোগের কারন (Heart Attack Causes)

হৃদরোগের কারন (Heart Attack Causes)
হৃদরোগের (Heart Attack) অনেক কারণ থাকতে পারে তবে, প্রধান কারন হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) এবং এথেরোক্লোরোসিস-কে ধরা হয়। এছাড়া, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের জটিলতা কিংবা হৃদপিণ্ডের গঠনগত পরিবর্তন, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনকেও হৃদ রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের রোগকেও হৃদরোগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। প্রান্তিক ধমনীর গঠনগত সমস্যার কারনেও হৃদরোগ হতে পারে।
হৃদরোগ এবং তার প্রকারভেদ (Heart Attack Types)

হৃদরোগ এবং তার প্রকারভেদ (Heart Attack Types)
অনেক ধরনের হৃদরোগ (Heart Attack) দেখা যায়। তবে হার্ট ফেইলিউর, উচ্চ রক্তচাপের কারনে, করোনারি, কার্ডিও মায়োপ্যাথি, কার্ডিয়াক ডিস্রিদ্মিয়াস, স্ট্রোক, জন্মগত হৃদরোগ, বাতজ্বরের কারনে হৃৎপিণ্ডের ভালভ নষ্ট হয়ে যাওয়া, এরকম আরো অনেক ভাবে হৃদরোগের ধরন এবং চিকিৎসার প্রকারভেদ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কথা বলেন এবং রোগীদের সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হৃদরোগ ঝুঁকির কারণ (Heart Attack Risk Factors)

হৃদরোগ ঝুঁকির কারণ (Heart Attack Risk Factors)
হৃদরোগের ঝুঁকি (Heart Attack Risk) সর্ম্পকে জানলে অবাক হবেন আপনিও। কখনো অসাবধান কিংবা হেলাফেলা করা ঠিক নয় হৃদরোগকে। জেনে নিন এর ঝুঁকির কারনগুলো।
- যারা ধূমপান করে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে
- অতিরিক্ত পরিমাণে মদ পান করার কারনে
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে
- বংশগতভাবে কারো যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে এবং উচ্চরক্তচাপ থেকে থাকে তবে হৃদরোগের ঝুঁকির মাত্রাও বেড়ে যায়
- বেশি পরিমাণ শাক সবজি না খাওয়ার কারনে
- যাদের শরীরে মেদ বেড়ে যাচ্ছে
- কায়িক পরিশ্রম না হলে, সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে টানা
- বায়ুদূষণ এর জন্য হৃদরোগ হওয়াটা একটা স্বাভাবিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হয়ে গেছে
- জীবনযাপনের ধরন উল্টাপাল্টা হলে
- উচ্চ লিপিড বিদ্যমান থাকা
- অতিরিক্ত ওষুধ সেবন
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ওষুধ সেবন
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বেশি পান করলে
- করোনার প্রভাবে বাজেভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে
- যারা পানের সাথে জর্দা বেশি খায় তাদের
- ফাস্টফুড কিংবা বাইরের খাবার বেশি খেলে
- মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট বেশি খাওয়া হলে
- মানসিক চাপ বেশি নেয়া হলে
- পরিমিত ঘুম না হলে
মধ্য বয়স্কদের হৃদরোগে (Heart Attack) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে ৬০ বছরের উর্ধ্বে যারা থাকেন তাদের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কারণ, দেহের সিরাম কোলেস্টেরল এর মাত্রা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। যার কারনে ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
তবে তারতম্য দেখা যায় নারী – পুরুষের ক্ষেত্রে। কেননা, সিরাম কোলেস্টেরল বাড়ার মাত্রা নারী- পুরুষের মধ্যে উঠানামা করে! আর সেইজন্যই পুরুষদের হৃদরোগে আ২ক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। তবে, যদি কোনো মধ্য বয়স্ক নারীর ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তাহলে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি পুরুষদের থেকে বেশি থাকে।
আর নারী-পুরুষ ভেদাভেদের কারণ হচ্ছে, হরমোনাল কারণ। আর সেজন্যই পুরুষদের ঝুঁকি বেশি থাকে নারীদের থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার। আর হৃদরোগের পূর্বসূরি এথেরোসক্লোরোসিস অনেকের একদম ছোট থেকেই হয়।
এক গবেষণার ফলশ্রুতিতে জানা যায়, প্রতি তিন জনে এক জন মারা যায় এই জটিলতায়। এর জন্য আসলে সচেতনতা আর শিক্ষা ছাড়া আর কোনো প্রতিকার খুঁজে পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত।
হৃদরোগের লক্ষণ (Heart Attack Symptoms)

হৃদরোগের লক্ষণ (Heart Attack Symptoms)
হৃদরোগের লক্ষণগুলো (Heart Attack Symptoms) জানা থাকলে হয়ত কোনো সময় কোনো এক মানুষের প্রাণও বাচাঁতে পারেন আপনি। তাই জেনে নিন হৃদরোগের লক্ষণগুলো।
- বুক ব্যথা – প্রথমে চিনচিনে পরে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া
- বাম পাশে ব্যথা হওয়া
- অস্বস্তি বোধ হওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- পিঠে ব্যথা
- পাকস্থলীর উপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হওয়া
- গলা ব্যথা হওয়া
- বাম হাত অবশ হয়ে যাওয়া কিংবা ব্যথা হওয়া
- মাথা হুট করে হাল্কা হয়ে যাচ্ছে এরকম মনে হওয়া
- ঘাড় এবং চোয়ালে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি বোধ হওয়া
গর্ভধারণ এর সময় যদি কারো হৃদরোগের (Heart Attack) সমস্যা দেখা যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া প্রচুর শাক সবজি খেতে হবে এবং বেশি ক্যালরি যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করতে হবে এবং বায়ু দূষণ হয় এরকম জায়গা বসবাস করা পরিহার করতে হবে। রাস্তার কালো ধোঁয়া কিংবা ধুলাবালিতেও অনেকের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, এবং যেখানে ধুলাবালি কিংবা কালো ধোঁয়া বেশি সেসব জায়গা পরিহার করতে হবে।
মূলত ঝুঁকি কারণ গুলো সম্পর্কে জেনে সে বিষয়ে নিজেদের খেয়াল রাখা হলে তবেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া পুরাপুরি সম্ভব না হলেও ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ