
উচ্চ রক্তচাপ
মানুষের শরীরের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম এবং অঙ্গ ভেদে সেসবের সুনির্দিষ্ট কাজ পর্যায়ক্রমে এবং ধারাবাহিকভাবে চলতে পারলেই, তবেই হিউমেন বডি সুস্থ আছে বলা যায়। সেক্ষেত্রে রক্তের চাপের (Blood Pressure) উঠা নামা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শরীরের সুস্থতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। বংশগত উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিংবা ৫-১০% কেইসে বিভিন্ন রোগের কারনে হওয়া উচ্চরক্তচাপ কিংবা হাইপারটেনশন হলে কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় সবসময় উর্ধ্বে থাকবে।
রক্তচাপের আর্দশ মান (Blood Pressure Range)

রক্তচাপের আর্দশ মান
স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরের রক্তচাপ (Blood Pressure), যেটাকে আমরা আদর্শ রক্তচাপ বলতে পারি সেটি হচ্ছে ৮০/১২০ আর যদি সেটা বেড়ে গিয়ে ৮০/১৩০ হয়, তবে সেটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় অনুকূল রক্তচাপ হিসেবে। তবে এর বেশি ৮৫/১৪০ কিংবা তার ও বেশি হলে সেটিকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
প্রিহাইপারটেনশন কিংবা অনুকূল রক্তচাপ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ না হলেও ধরা হয় প্রিহাইপারটেনশনের জন্য মানুষের শরীরে কিংবা কোনো রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরের জন্য উচ্চ রক্তচাপ বিকশিত হবার একটা সুযোগ থাকবে।
তবে যেসব রোগীদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য প্রিহাইপারটেনশনের এক গবেষণার ফলশ্রুতিতে জানা গেছে প্রিহাইপারটেনশনের রক্তচাপের মাত্রা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং সেক্ষেত্রে তাদের দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ (Types of Blood Pressure)

উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ
প্রাইমারি হাইপারটেনশন এবং সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে কিন্তু কিছু রোগের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) শরীরের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্ট্রোক কিংবা প্যারালাইজড , হার্ট ফেইলিউর হবার মতো অবস্থাও হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ (High Blood Pressure Symptoms)

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
এখন পর্যন্ত গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ৫০ টির অধিক জিনকে মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের (High Blood Pressure) বাহক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গেলেও কিছু বদভ্যাস এবং রুটিনমাফিক না চলার কারনে কিংবা নিজের অযত্নের কারনেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যেমনঃ
- খাবারের সাথে কাঁচা লবণ গ্রহণ কিংবা অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- সঠিক সময়ে ঘুম না হওয়া
- ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন
- ঘিঞ্জি জায়গায় বসবাস এবং বসবাসের জায়গা পরিষ্কার না করা
- অতিরিক্ত শব্দ আসে এরকম জায়গায় বাসা নিয়ে থাকা
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- অতিরিক্ত কাজের চাপ
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেয়া
- শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমা
- নিয়মিত হাঁটা চলা কিংবা ব্যায়াম না করলে
- মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে
- অতিরিক্ত ধূমপান করলে
- খাদ্যাভ্যাস উল্টাপাল্টা হলে এবং সময়ের খাবার সময়ে না খেয়ে, ঘন্টার পর ঘন্টা না খেয়ে থাকলে
- পরিমাণ মত শাক সবজি, মাছ, মাংস না খেলে
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ( কফি, চা) বেশি পরিমাণে খেলে
- হুট করে অনেক বেশি ওজন বেড়ে গেলে
- বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে, স্বাভাবিকভাবেই রক্তের চাপ বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়
- অন্যান্য রোগের কারনে ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে
- গর্ভাবস্থায় অনেকের উচ্চরক্তচাপ হয়
- ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়
- কিডনির রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপ স্বয়ং রোগের জন্যই দেখা দেয়
- ধমনীর বংশগত রোগের কারনে
- পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার হলে
এরকম আরো অনেক কারনে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার জন্যই বলা হয় সব সময়।
উচ্চ রক্তচাপের কারন (High Blood Pressure Causes)

উচ্চ রক্ত চাপের প্রতিরোধ
আমরা অনেক সময়ে সঠিকভাবে রক্তচাপ (Blood Pressure) পরিমাপ করি না বা সেদিকে এতো জোর দেই না। কিন্তু সেটি আসলে করা উচিত না। যারা ধূমপান করে তাদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ মাপার অন্তত এক ঘন্টা আগে কোনো রকম ধূমপান করা উচিত না এবং মদ পান করে যারা তাদের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য।
অনেক হাঁটাহাঁটি করে এসে সাথে সাথে রক্তচাপ পরিমাপ করতে হয় না। এতে কখনোই সঠিক ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অবশ্যই সপ্তাহে তিনবার হলেও প্রেশার মাপানো উচিত বলে মনে করা হয়। এতে জটিল কোনো অবস্থায় পড়ার আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের প্রতিরোধ (High Blood Pressure Treatment)

উচ্চ রক্ত চাপের প্রতিরোধ
প্রাইমারি ভাবে উচ্চ রক্তচাপের (High Blood Pressure) জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যেনো রোগী ওজন কমায় এবং শারীরিক পরিশ্রম করে। হাঁটা চলা, নিয়মিত ঘুম এই রোগের প্রধান ওষুধ। খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তন এবং সঠিক নিয়মে খাওয়া দাওয়া, বেশি শাক সবজি খাওয়া এসবের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তবে সেকেন্ডারি মাত্রায় চলে গেলে সেক্ষেত্রে নিজেরা অবশ্যই চিকিৎসা না করে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে তবেই কোনো ওষুধ সেবন করা উত্তম।
উচ্চ রক্তচাপের (High Blood Pressure) কারনে জটিল সমস্যা দেখা দিলেও প্রথম থেকেই রোগীর প্রতি যত্নশীল এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়মমাফিক করা গেলে ঝুঁকি কম থাকে। তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে তবেই সে বিষয়ে চিকিৎসা নেয়াটা খুব জরুরি তাই উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে সেটা সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের রিকমেন্ডেশন।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ