টমেটো (Tomato) একটি ফল হলেও এটি সাধারণত এটি কে আমরা সবজির কাতারেই ফেলি।
এটি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভর্তি এই ফল অথবা সবজি আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালেই উৎপাদিত হয় বেশি কিন্তু এখন সবসময় উৎপাদন করা হচ্ছে।
টমেটোতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই। টমেটো খেলে আমাদের শরীরের রক্তের লাল কণিকা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ফ্যাকাশে ভাব ও রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য যা বিশেষ ভাবে দরকার যেমন লৌহ এবং অন্যান্য ক্ষার টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আপেল, কমলা লেবু, আঙ্গুর প্রভৃতি দামি ফলের চেয়ে টমেটোতে রক্ত উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি আছে বলে বিজ্ঞানীদের মত। এতে লবণ, পটাশ , চুন আর ম্যাঙ্গানিজ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
টমেটোর পুষ্টি উপাদান
দেখে নেয়া যাক প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছেঃ
- ০.৯ গ্রাম আমিষ
- ০.৮ মিলিগ্রাম আশ
- ৩.৬ গ্রাম শর্করা
- ০.২ গ্রাম চর্বি কিলোক্যালরি শক্তি
- ৪৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- ২০ মিলিগ্রাম ফসফরাস
- ০.৬৪ মিলিগ্রাম লৌহ
- ৩৫১ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন
- ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগের কার্যকর।
ইউরোপে টমেটোর গুণ সম্পর্কে বলা হয় টমেটোর রং যদি লাল হয় চিকিৎসকের মুখ হয় নীল অর্থাৎ নিয়মিত টমেটো খেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার হয় না।
টমেটোর উপকারিতা

টমেটোর উপকারিতা
চলুন জেনে নেওয়া যাক টমেটো খাওয়ার বিশেষ উপকারিতাসমূহ
- চর্ম রোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। ত্বকে যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে তবে প্রক্রিয়াজাত করে টমেটো ব্যবহার করতে পারেন।
- টমেটোর থেকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ভিটামিন এ,সি, কে, ফলেট এবং পটাশিয়াম। টমেটো থেকে আরও যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে থায়ামিন, ভিটামিন বি ৬.,নায়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার। ১ কাপ টমেটোর মধ্যে থাকে দুই গ্রামের মতো ফাইবার এবং রয়েছে অনেকটা পরিমাণ পানিও।
- বয়সের ছাপ দূর করতে এবং মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে টমেটো বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।এর রস মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল করে। বয়স বাড়তে থাকলে মানুষের মুখে যে বয়সের ছাপ পড়ে টমেটো দেওয়ার ফলে সেই ছাপ লুকাতে থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দু’টি টমেটো খাওয়া হয়।
- টমেটো রক্তস্বল্পতা দূরীকরণের সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন প্রতিদিন একবার /দুইবার টমেটো খেলে রক্তস্বল্পতা সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে।
- টমেটো জ্বর নিরাময়ে সহায়ক ।দেহের তাপমাত্রা বিভিন্ন কারণে বাড়তে পারে সামান্য জ্বর হলে টমেটো খেলে আরাম পেতে পারেন।
- সর্দি-কাশি প্রতিরোধে টমেটো বেশ কার্যকর। সর্দি কাশি হলে এক বা দুটি টমেটো নিয়ে কেটে অল্প চিনি বা লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন এর ফলে সর্দি কাশিতে আরাম পাবেন।
- অনেকের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ থাকায় এটি রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে মাড়ি থেকে যাদের রক্তপাত হতে থাকে তারা এর থেকে প্রতিকার পেতে পারেন।
- নিয়মিত টমেটো খেলে ত্বক সুস্থ থাকে আর ত্বক হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকে বলিরেখা পড়ার পরিমাণ কমায়।
- টমেটোর ভেতরে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অনেক উপকার হাড় দুর্বল যাদের তারা এটা খেতে পারেন।
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
কাঁচা টমেটোর উপকারিতা

কাঁচা টমেটোর উপকারিতা
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কাঁচা টমেটো খাওয়ার কিছু অসাধারণ উপকারিতা
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কিভাবে? আসুন জেনেনি দশ-বারোটা টমেটো নিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করে নিন তারপর টমেটোর স্কিন টা খুলে সারা মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালো করে মুখটা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এই প্রক্রিয়াটা কয়েকবার করলে ত্বকের বলিরেখা কমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- টমেটো ক্যান্সার প্রতিরোধক। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে থাকা লাইকোপেন প্রোস্টেট,কলোরেক্টাল ও স্টমাক ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই লাইকোপেন হলো একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের বিভাজন ঠিক মত হতে সাহায্য করে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার সেলের জন্ম নেয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে। আর যদি একবার ক্যান্সার কোষ জন্ম নিয়ে থাকে। তখন যাতে তার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি না হয় সেদিকে টমেটোর এই বিশেষ উপাদান টি খেয়াল রাখে ফলে স্বাভাবিকভাবেই মারণ রোগ শরীরকে ধ্বংস করার সুযোগ পায় না।
- টমেটোতে রয়েছে কিউমেরিক ও ক্লোরজনিক আ্যাসিড যা কার্সিনোজের এর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ধূমপান জনিত ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এখন একান্তই যারা ধূমপান ছাড়তে পারছেন না দয়া করে দিনে দুই তিনটা করে কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন।
- আমাদের শরীরে কখনো খাবারের মাধ্যমে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে টক্সিক উপাদানের প্রবেশ ঘটে এই ক্ষতিকারক উপাদান টি যাতে শরীরে কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখে শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান তা হলো এন্টিঅক্সিডেন্ট সেই সঙ্গে একাধিক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এটি। টমেটো যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি খাবার তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কাঁচা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেক চিকিৎসক।
- ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যা আমরা টমেটো থেকে প্রচুর পরিমাণে পাই। যা স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত যাদের পরিবারে হাই কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেসার রোগের ইতিহাস আছে তারা আজ থেকে কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন।
- চুলের সৌন্দর্য কে না চাই, চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন এ এর কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে আর এই উপাদানটি রয়েছে টমেটোয় প্রচুর মাত্রায়। তাই দীর্ঘদিন যদি চুল সুন্দর রাখতে চান তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কাচা টমেটো খাওয়ার বিকল্প নাই।
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার নিয়মাবলী

গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার নিয়মাবলী
গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভবতী মহিলারা কি খাবেন এবং কি খাবেন না সে সম্পর্কে অনেক সচেতন থাকতে বলেন ডাক্তাররা। তাদের খাবার মেনুতে ফল এবং সবজি থাকা উচিত তবে অনেকে ভাবেন তারা গর্ভাবস্থায় টমেটো খেতে পারবে কিনা চলুন এর উত্তর জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইতিমধ্যেই আমরা টমেটোর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছি এখন আমরা জেনে নিই গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
- রক্ত ক্ষয় রোধ করে।
- জন্মগত ত্রুটি গুলো প্রতিরোধ করে।
- হজমশক্তি উন্নত করে।
- রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ