তরমুজ (Watermelon) এমন একটি ফল, যার ৯২ শতাংশই পানি এবং বাকি শতাংশে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং আঁশ। বলা যায়, তরমুজের প্রধান অরিজিন আফ্রিকাতে কিন্তু একটু বাগবিতণ্ডা দেখা যায় এটা নিয়ে যে, পশ্চিম আফ্রিকা নাকি উত্তর আফ্রিকা থেকে প্রথম তরমুজ নামক ফলটির প্রথম দেখা পাওয়া যায়।
সপুষ্পক এই উদ্ভিদের ফল একটি মৌসুমি ফল হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মকালে যে যে ফল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে তরমুজ অন্যতম। বাংলা মাসের চৈত্র ও বৈশাখ মাসের দিকে এই ফলটি খাওয়ার জন্য একদম সঠিক সময়, কেননা এই সময় তরমুজের স্বাদ ও গন্ধে এবং পুষ্টিমানে টইটম্বুর থাকে।
বাংলাদেশের অনেক জেলাতে চাষীরা তরমুজের চাষ করে বাম্পার ফলন নিয়ে অনেক লাভবান হয়েছেন। বিশেষ করে, বেকারত্ব কাটাতে অনেকেই তরমুজ চাষ করা শুরু করে আজ নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং তরমুজ চাষের মাধ্যমে দেশের বেকারত্বের হার অনেকাংশে কমে এসেছে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অবস্থা আর মাটির উপাদান বিবেচনা করে দেশের কয়েক জায়গায় অনেক বাম্পার ফলনের তরমুজ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হয়েছেন অনেক চাষী।
তরমুজের পুষ্টি গুণ
পুষ্টিমান নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে থাকে –
- ৩০ গ্রাম ক্যালরি
- টোটাল ফ্যাট . ২ গ্রাম
- পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট . ১ গ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১১২ মিলিগ্রাম
- টোটাল কার্বোহাইড্রেট ৮ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার . ৪ গ্রাম
- সুগার ৬ গ্রাম
- প্রোটিন . ৬ গ্রাম
- ভিটামিন এ ১১%
- ভিটামিন সি ১৩%
- আয়রন ১%
- ম্যাগনেসিয়াম ২%
১০০ গ্রাম তরমুজের পুষ্টি উপাদান যে পরিমানে বিদ্যমান থাকে তা থেকে বলা যায় নিঃসন্দেহে এটি কত সময়োপযোগী ফল চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে একটু পুষ্টি যোগানোর জন্য।
তরমুজ চাষের নিয়মাবলী

তরমুজ চাষের নিয়মাবলী
তরমুজের বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে একটা উৎসব উৎসব ভাব দেখা দেয়, যেটি চলমান থাকে বীজ বপন, চারা উৎপাদন, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ এবং ফল উত্তোলনের পর পর্যন্ত। আর বাম্পার ফলনের পর চাষীদের মুখের হাসি দেখেই বলে দেয়া যায় ঠিক কি পরিমাণ তরমুজ বেচা- কেনা এবং চাষ হয়েছে সেই মৌসুমে। বারো মাসী ফল না বিধায় শুধু কয়েক মাসের কষ্টের ফলশ্রুতিতে চাষীদের ঘরে যে লাভের একটু সুখ ভরা ভাত প্লেটে প্লেটে যায় সেটাতেই অনেকে স্বাবলম্বী হবার প্রধান এবং একমাত্র পন্থা হিসেবে দেখেন।
তরমুজের বীজের উপকারিতা

তরমুজের বীজের উপকারিতা
তরমুজের ব্যবহার শুধু ফল হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়, বরঞ্চ তরমুজের বীজ দিয়েও অনেক কার্য সাধিত হয়। গবেষণার ফলশ্রুতিতে জানা গিয়েছে, তরমুজের বীজের বিদ্যমান যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে তা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং বিভিন্ন রোগ বালাই নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরমুজের বীজে বিদ্যমান প্রোটিন, ভিটামিন বি, মিনারেল, আয়রন, ফ্যাট শরীরের শক্তি যোগাতে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে উপকারী।
তরমুজের উপকারিতা

তরমুজের উপকারিতা
তরমুজের উপকারিতা নিয়ে পর্যালোচনা করতে গেলে দেখা যায় তরমুজের উপকারিতা অনেক এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
- ক্যান্সারের প্রবণতা কমাতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার এবং কোষ বৃদ্ধি রোধ করতে তরমুজে বিদ্যমান উপাদান গুলো অনেক সাহায্য করে।
- তরমুজের জুস আমাদেরকে প্রাণবন্ত করে তোলে কাঠ ফাটা গরমের মধ্যে এবং হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে তরমুজ খুবই উপকারী, কেননা, তরমুজের বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলাকে সতেজ ও সাবলীল রাখে। - ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তরমুজের ভূমিকা অসাধারণ।
- তরমুজের মধ্যে বিদ্যমান এক ধরনের উপাদান আমাদের শরীরকে সূর্যের বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- তরমুজে প্রচুর ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকাতে এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং সর্দি কাশির মত ফ্লুজনিত রোগ বালাই নিরাময়ে সাহায্য করে।
- পেটে পীড়া দূরীভূত করতে তরমুজ অনেক উপকারী।
- বদহজমের কাজে তরমুজ টনিকের মতো কাজ করে।
- হাড় মজবুত করতে তরমুজের ভূমিকা অনেক। তাছাড়া দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম প্রোভাইডের জন্য ও তরমুজ অনেক উপকারী।
- মুখের ঘা নিরাময়ে, বুকের ধড়ফড় করা কমাতে এবং হৃদরোগের সমস্যা দূরীকরণের জন্য ও তরমুজ অনেক উপকারী।
এছাড়া আরো নানাবিধ কারণে তরমুজ উপকারী। তবে উপকারিতা যেমন আছে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে নানাবিধ সমস্যার ও সম্মুখীন হতে হয় অনেককে। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তরমুজ খেতে হবে স্বল্প পরিমাণে আর অবশ্যই যেনো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তরমুজ খাওয়া হয় সে বিষয়ে কড়া নজর দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।
আবার দেখা যায়, অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম রঙ মিশিয়ে তরমুজ লাল করার চেষ্টা করে এবং সেটি শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তরমুজ কেনার সময়ে অবশ্যই ভালোমতো দেখে শুনে কেনা উচিত। ঠিক যেসব কারনে তরমুজ শরীরের উপকারে আসে, অতিরিক্ত সেবনের ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত সবারই।
সুদূর আফ্রিকা থেকে তরমুজের বিস্তার হলেও এখন বাংলাদেশের মাটিতে তরমুজের গুণগান সব জেলায় জেলায়। এটি শুধু শরীরের জন্যই নয়, বরং বাণিজ্যিক ভাবেও আমাদের রপ্তানি শিল্পে যথেষ্ট গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করছে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই কমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার মতামত জানান। ধন্যবাদ